অপরাধ ও বিচ্যুত আচরণের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর। [NU- 2018, 20, 22] ★★★
ভূমিকা: অপরাধ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিয়ম লঙ্ঘন করে। পক্ষান্তরে, বিচ্যুতি সমাজের নীতিমালার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। অপরাধ এবং বিচ্যুতি উভয়ই সমাজের স্বীকৃত নিয়ম-নীতি ও মূল্যবোধের বিরোধী কাজ হিসেবে বিবেচিত। তবে এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অপরাধ হলো আইনভঙ্গকারী কাজ, যার জন্য শাস্তি নির্ধারিত। অন্যদিকে, বিচ্যুতি হলো এমন আচরণ যা সামাজিক নীতি ও আদর্শের বিরোধিতা করে, তবে এটি সবসময় আইন দ্বারা শাস্তিযোগ্য নয়।
অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য: অপরাধ হলো আইন ভঙ্গের কাজ, যা শাস্তিযোগ্য। পক্ষান্তরে, সামাজিক মূল্যবোধ পরিপন্থি কাজকে বিচ্যুতি বলা হয়, যা শাস্তিযোগ্য না হলেও নেতিবাচকভাবে মূল্যায়িত হয়। নিম্নে অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো:
১. আইনভঙ্গ ও সামাজিক মূল্যবোধ: অপরাধ হলো এমন কাজ যা কোনো রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ এবং আইন ভঙ্গকারী হিসেবে বিবেচিত। পক্ষান্তরে বিচ্যুতি হলো এমন আচরণ যা সমাজের মূল্যবোধ ও আদর্শের পরিপন্থি, কিন্তু এটি আইনের অন্তর্ভুক্ত নয়।
আরো পড়ুন: প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্বটি আলোচনা কর।
২. শাস্তির বিধান: অপরাধের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক শাস্তি নির্ধারিত। এটি লঘু বা গুরু, উভয় প্রকারের হতে পারে। কিন্তু বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তি নেই, তবে সমাজে এটি নেতিবাচকভাবে দেখা হয়।
৩. সব অপরাধ বিচ্যুতি, কিন্তু সব বিচ্যুতি অপরাধ নয়: সব অপরাধই সামাজিক বিচ্যুতি হিসেবে বিবেচিত হয়। পক্ষান্তরে সব বিচ্যুতিমূলক আচরণ অপরাধের মধ্যে পড়ে না।
৪. সামাজিক প্রতিক্রিয়া: অপরাধমূলক কাজের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে বিচ্যুতির ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিক্রিয়া বেশি কার্যকর যার মাধ্যমে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নীতিমালা মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ হয়।
৫. পরিকল্পনা ও ভয়: অপরাধ সাধারণত পরিকল্পিতভাবে করা হয় এবং এটি করতে সাধারণ মানুষ ভীত থাকে। কিন্তু মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বিচ্যুত আচরণ করে এতে তাদের ভয় কম থাকে।
৬. ক্ষতির মাত্রা: অপরাধ সমাজের জন্য গুরুতর ক্ষতিকর এবং এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কিন্তু বিচ্যুত আচরণ তুলনামূলক কম ক্ষতিকর এবং সমাজে দ্রুত সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে।
৭. নিয়ন্ত্রণের জটিলতা: অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা প্রয়োজন। পক্ষান্তরে বিচ্যুতি আচরণ নিয়ন্ত্রণ সহজ এবং সমাজের অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই এটি সম্ভব।
আরো পড়ুন: গ্রামীণ সমাজের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট
উপসংহার: পরিশেষে এটাই সুস্পষ্ট যে ,অপরাধ ও বিচ্যুতি উভয়ই সমাজের নিয়ম-নীতি ও মূল্যবোধের বিরোধিতা করে। তবে অপরাধ আইনবিরোধী কাজ, যেখানে শাস্তি নির্ধারিত, এবং বিচ্যুতি হলো সামাজিক নীতিবিরুদ্ধ আচরণ, যা শাস্তিযোগ্য নয়। উভয়ের প্রভাবেই সমাজের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। তাই সমাজে সুষ্ঠু শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অপরাধ দমন ও বিচ্যুতির নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ।