প্যারোলের বৈশিষ্ট সমূহ

প্যারোলের বৈশিষ্ট সমূহ লেখো। [NU- 2020]

প্যারোল (Parole) হলো এমন একটি শর্তসাপেক্ষ মুক্তির ব্যবস্থা, যেখানে কোনো বন্দিকে নির্দিষ্ট শর্তে কারাগারের বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এটি মূলত বন্দির ভালো আচরণ, সংশোধন ও পুনর্বাসনের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। তবে এটি সম্পূর্ণ মুক্তি নয়; বরং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হয় এবং বন্দিকে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়।

Jeremy Bentham: “প্যারোল হলো অপরাধীদের সংশোধনের একটি মাধ্যম, যা তাদের পুনরায় সমাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়, তবে এটি নির্দিষ্ট শর্ত ও নিয়মের আওতায় পরিচালিত হয়।”

প্যারোলের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

শর্তসাপেক্ষ মুক্তি: প্যারোল কোনো বন্দির জন্য সম্পূর্ণ মুক্তির সমতুল্য নয়; বরং এটি নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে প্রদান করা হয়। বন্দিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়, যেমন নির্দিষ্ট এলাকায় অবস্থান করা, নিয়মিত কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করা এবং কোনো অপরাধে লিপ্ত না হওয়া। যদি প্যারোলপ্রাপ্ত ব্যক্তি শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে পুনরায় কারাগারে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

বিচার ও প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন: প্যারোল সাধারণত স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেওয়া হয় না; বরং এটি বিচারিক বা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়। বিচারকের সুপারিশ, প্যারোল বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং সংশ্লিষ্ট কারাগারের প্রতিবেদন এর ওপর নির্ভর করে প্যারোল মঞ্জুর করা হয়। বন্দির অতীত অপরাধ, কারাগারে তার আচরণ, সংশোধনের সম্ভাবনা ইত্যাদি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন: উপনিবেশবাদ কি?

ভালো আচরণ ও সংশোধনের ভিত্তিতে অনুমোদন: প্যারোল পেতে হলে বন্দিকে কারাগারে ভালো আচরণ প্রদর্শন করতে হয়। বন্দির শাস্তির সময়কালে সে কীভাবে আচরণ করেছে, সংশোধনমূলক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে কি না এবং সমাজে পুনর্বাসিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ: প্যারোলপ্রাপ্ত বন্দি পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না; বরং তাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সাধারণত, তাকে নির্দিষ্ট সময় পর পর প্যারোল অফিসারের কাছে রিপোর্ট করতে হয় এবং তার দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে হয়। যদি প্যারোল বোর্ড মনে করে যে বন্দি শর্ত মেনে চলছে না, তাহলে তার প্যারোল বাতিল করা হতে পারে।

সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ: প্যারোল বন্দিকে সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়। এটি তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করে এবং অপরাধ থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করে। অনেক ক্ষেত্রে, প্যারোলপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পুনরায় কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয় এবং তার পরিবার ও সমাজের সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে সে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতে পারে।

নির্দিষ্ট শর্ত মেনে চলার বাধ্যবাধকতা: প্যারোলপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট শর্ত মেনে চলা বাধ্যতামূলক। তিনি মাদক বা অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারবেন না, নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না এবং নির্দিষ্ট এলাকা থেকে দূরে থাকতে হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, তাকে সমাজসেবা বা নির্দিষ্ট কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়, যা তার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

পুনরায় গ্রেফতারের সম্ভাবনা: যদি প্যারোলপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্ধারিত শর্ত লঙ্ঘন করেন, তাহলে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হতে পারে। প্যারোল কর্তৃপক্ষ বন্দির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে, এবং যদি দেখা যায় যে সে পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হয়েছে বা প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘন করেছে, তাহলে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়। এটি নিশ্চিত করে যে প্যারোল ব্যবস্থা সমাজের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে না।

আরো পড়ুন: গ্রামীণ সমাজের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট

প্যারোল বন্দিদের জন্য একটি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা, যা তাদের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে এবং সমাজে পুনর্বাসিত করতে সাহায্য করে। এটি বন্দিদের আত্মসংশোধনের সুযোগ দেয় এবং সমাজে ধীরে ধীরে একীভূত হওয়ার পথ তৈরি করে। তবে, এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর পর্যবেক্ষণ ও শর্ত প্রয়োগ করা আবশ্যক, যাতে প্যারোলপ্রাপ্ত ব্যক্তি পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন। সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে, প্যারোল ব্যবস্থা অপরাধীদের পুনর্বাসন ও সমাজে তাদের পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman
Articles: 8