পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট আলোচনা করো।
পুঁজিবাদ (Capitalism) বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এটিকে মুক্ত বাজার অর্থনীতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এতে উৎপাদনের উপকরণসমূহ ব্যক্তিগত মালিকানার নিয়ন্তণে থাকে। এটি মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয় এবং পুঁজির ব্যবহার মূল সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত উদ্যোগ, বাজার প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক গতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পুঁজিবাদঃ পুঁজিবাদ (Capitalism) হল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে মুনাফা তৈরির লক্ষ্যে ব্যবসা, কারখানা এবং উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার নিয়ন্ত্রণ থাকে। সহজে বলতে গেলে, যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে না এবং সরবরাহ ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তাকে পুঁজিবাদ বলে।
আরো পড়ুনঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও গুরুত্ব
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরুপ
১। উদ্যোক্তার স্বাধীনতা: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ব্যক্তিরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
২। ব্যক্তিগত মালিকানা: কারখানা, জমি ও অন্যান্য উপকরণ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন থাকে।
৩। মুনাফার উদ্দেশ্য: এই ব্যবস্থায় উৎপাদনের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে মুনাফা অর্জন করা।
৪। মূল্য প্রক্রিয়া: বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ হয়।
৫। মুক্ত বাণিজ্য: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ কম থাকে।
৬। সরকারি হস্তক্ষেপ মুক্ত: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপ খুবই সীমিত।
৭। ভোক্তার স্বাধীনতা: ভোক্তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য ক্রয়, বিক্রয় ও ব্যবহার করতে পারে।
৮। শ্রমিক শোষণ: মালিক শ্রেণী শ্রমিকদের শ্রমকে শোষণ করার মাধ্যমে বেশি মুনাফা উপার্জন করার চেষ্টা করে।
৯। পণ্য উৎপাদনের প্রাধান্য: বিক্রয়ের জন্য পণ্য উৎপাদনই পুঁজিবাদের মূল লক্ষ্য।
১০। শ্রেণি বিভাজন: সম্পদের বৈষম্যের ফলে সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে স্পষ্ট বিভেদ সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান
পুঁজিবাদের সুবিধা
উন্নত উৎপাদনশীলতা: প্রতিযোগিতার ফলে প্রযুক্তি ও উৎপাদনশক্তির উন্নয়ন ঘটে।
ব্যক্তিগত উদ্ভাবনের সুযোগ: ব্যক্তিরা তাদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
বাজার সম্প্রসারণ: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতির বিকাশ ঘটে।
পুঁজিবাদের অসুবিধা
শ্রেণি বৈষম্য: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ধনীরা আরও ধনী হয়, আর দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়।
শ্রমিক শোষণ: শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান করা হয় না বরং তাদের শোষণ করা হয়।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা: মুনাফার লক্ষ্যে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে।
আরো পড়ুনঃ লাহোর প্রস্তাব কি?
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৮০% নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজিবাদ । এটি ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করার মাধ্যমে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তবে পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো একদিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সহায়ক হলেও এটি সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করে। তাই সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে এর নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কার করা গেলে এই ব্যবস্থা একটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।