আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও

 আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও এবং আমলাতন্ত্রের ত্রুটিগুলো কী কী?

আমলাতন্ত্র (Bureaucracy) হলো একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যেখানে সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য স্থায়ী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রক্রিয়া, যা নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। সাধারণত রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত কর্মচারীরা আমলা নামে পরিচিত এবং এদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাই হলো আমলাতন্ত্র। 

আমলাতন্ত্র শব্দের উৎস: আমলাতন্ত্র (Bureaucracy) শব্দটি ফরাসি শব্দ Bureau  যার অর্থ “অফিস বা ছোট ডেস্ক” এবং গ্রিক শব্দ Kratein  অর্থ “শাসন করা” । সুতারাং আমলাতন্তের অর্থ হলো “অফিস দ্বারা শাসন করা।”। আমলাতন্ত্র আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (1864-1920) আধুনিক সময়ে আমলাতন্ত্র সম্পর্কে প্রথম ধারনা দেন ।  

আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা: আমলাতন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন অভিমত প্রদান করেছেন। নিম্নে সেগুলাে উল্লেখ করা হলাে-  

১. এফ. এম. মার্কসের মতে: “আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের সংগঠন এবং সরকারি প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ পদ্ধতি।”

আরো পড়ুনঃ এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণিবিভাগ লিখ

২. অধ্যাপক গার্নারের মতে: “সরকারি সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা নির্ধারণ এবং কার্যকর করতে নিয়োজিত কর্মচারীরাই আমলাতন্ত্রের অংশ।”

৩. আমলাতন্ত্রের জনক Max Weber এর মতে, “কমবেশি প্রত্যেকটি বড় সংগঠনই আমলাতন্ত্রের নামান্তর।”

আমলাতন্ত্রের ত্রুটিগুলো: আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন সুবিধা থাকলেও এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি বিদ্যমান। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:

১. দীর্ঘসূত্রিতা: আমলাতন্ত্রের বড় সমস্যা হলো অযথা সময়ক্ষেপণ। কোনো সিদ্ধান্ত বা কাজ করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় যা জনগণের ভোগান্তি বৃদ্ধি করে।

২. উদাসীনতা: জনগণের চাহিদা ও অভিযোগ সম্পর্কে আমলারা প্রায়ই উদাসীন থাকে। তারা জনস্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে কেবল প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত থাকে।

৩. রক্ষণশীলতা: আমলারা অতিমাত্রায় রক্ষণশীল। তারা নতুন ধারণা বা পরিবর্তনকে সহজে গ্রহণ করতে চায় না এবং পূর্বনির্ধারিত নিয়ম অনুসরণেই সীমাবদ্ধ থাকে।

৪. লালফিতার দৌরাত্ম্য: যেকোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিল প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘ আনুষ্ঠানিকতা লালফিতার দৌরাত্ম্য সৃষ্টি করে। এটি প্রশাসনে স্থবিরতা আনয়ন করে।

৫. অহংবোধ: শিক্ষিত ও দক্ষ হওয়ার কারণে আমলারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে থাকে। এর ফলে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ও  তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। 

৬. জনবিচ্ছিন্নতা: আমলারা নিজেদেরকে জনগণ থেকে পৃথক ভাবে। ফলে তাদের কার্যক্রম জনস্বার্থে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৭. জনকল্যাণে ব্যর্থতা: উপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের মানসিকতা অনেক সময় জনগণের কল্যাণে বাধা সৃষ্টি করে। এটি জনগণকে শাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৮.পরিবর্তনের অনীহা: আমলারা প্রশাসনিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে  অনিহা প্রকাশ করে । ফলে আধুনিকীকরণে বাধা সৃষ্টি হয়।

৯. বাধাহীন ক্ষমতা: আমলাদের ক্ষমতার ওপর যথাযথ জবাবদিহিতা ও নজরদারির অভাবে তারা নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ এলিট আবর্তন কী?

১০. ব্যয়বহুল প্রশাসন: আমলাতন্ত্র পরিচালনা করতে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। এটি সরকারের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে।

আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আমলাতন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর দীর্ঘসূত্রিতা, লালফিতার দৌরাত্ম্য এবং জনবিচ্ছিন্নতা উন্নয়নের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমলাতন্ত্রের ত্রুটিগুলো দূর করতে সঠিক সংস্কার প্রয়োজন। দক্ষতা, গতিশীলতা এবং জনমুখী প্রশাসন গড়ে তোলা হলে আমলাতন্ত্র আরও কার্যকর হবে। 

Sima Khatun
Sima Khatun

আমি সিমা খাতুন। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স
কমপ্লিট করেছি। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে আমার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য সহজভাবে শেখাতে কাজ করি। শিক্ষার্থীদের সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোই আমার লক্ষ্য।

Articles: 128