যৌন পরিবাহিত রোগ বলতে কি বুঝ?

যৌন পরিবাহিত রোগ বলতে কি বুঝ? AIDS-এর কারণ ও প্রতিরোধ সমূহ আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ যৌন পরিবাহিত রোগ হলো এমন ধরনের সংক্রমণ বা অসুখ, যা মূলত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে একজন মানুষ থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগগুলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী বা ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। যৌন সম্পর্ক ছাড়াও এই রোগগুলো রক্তের মাধ্যমে, গর্ভাবস্থায় মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে, কিংবা দূষিত সুচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে।

সাধারণ যৌন পরিবাহিত রোগ:

  • গনোরিয়া (Gonorrhea)
  • সিফিলিস (Syphilis)
  • ক্ল্যামাইডিয়া (Chlamydia)
  • এইচআইভি/এইডস (HIV/AIDS)
  • হার্পিস (Herpes Simplex Virus)
  • হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের জনগণের নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয়

AIDS (Acquired Immunodeficiency Syndrome): AIDS (এইডস) হলো এক ধরনের যৌন পরিবাহিত রোগ, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়। এটি এইচআইভি (Human Immunodeficiency Virus) নামক ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট। এইডস কোনো সাধারণ রোগ নয়, বরং এটি এক জটিল অবস্থা, যেখানে দেহ বিভিন্ন সংক্রমণ ও ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হারায়।

এইডস-এর কারণ: এইডস-এর মূল কারণ হলো এইচআইভি ভাইরাস। এই ভাইরাস দেহে প্রবেশ করার পর রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা তথা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলো ধ্বংস করে। ফলে দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায় এবং মানুষ বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হয়।

সংক্রমণের মাধ্যমসমূহ:

i) অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক: এইডস ভাইরাস প্রধানত অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।

ii) রক্ত: দূষিত রক্ত বা রক্তদান প্রক্রিয়ায় সঠিক পরীক্ষার অভাবে এইচআইভি সংক্রমিত হতে পারে।

iii) সুঁচ বা সিরিঞ্জ: দূষিত সুঁচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়।

iv) মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে: গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা বুকের দুধের মাধ্যমে ভাইরাস শিশুতে সংক্রমিত হতে পারে।

লক্ষণসমূহ: এইডস-এর লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে স্পষ্ট নয়। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলো জটিল আকার ধারণ করে:

  • দীর্ঘমেয়াদি জ্বর
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি
  • ওজন কমে যাওয়া
  • লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া
  • ঘন ঘন সংক্রমণ, যেমন নিউমোনিয়া বা টিউবারকুলোসিস
  • গলায়, মুখে, বা জিহ্বায় ঘা

আরো পড়ুনঃ আগরতলা মামলার কারণ ও ফলাফল

এইডস প্রতিরোধের উপায়: এইডস একটি ভয়াবহ রোগ হলেও সচেতনতার মাধ্যমে এর সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিম্নে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপসমূহ উল্লেখ করা হলো:

১. সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা: কনডম ব্যবহার নিশ্চিত করা। যৌন সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন পরিহার করা।

২. রক্ত গ্রহণে সতর্কতা: রক্ত গ্রহণের আগে তা এইচআইভি পরীক্ষিত কিনা তা নিশ্চিত করা। সঠিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রক্তদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।

৩. নির্বীজিত সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার: চিকিৎসা বা ইনজেকশনের সময় নতুন ও নির্বীজিত সুচ ব্যবহার করা। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহার পরিহার করা।

৪. গর্ভাবস্থায় সতর্কতা: এইচআইভি পজিটিভ মা গর্ভধারণের সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।

৫. সচেতনতা বৃদ্ধি: স্কুল, কলেজ এবং কর্মক্ষেত্রে এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রচার করা। এইচআইভি পরীক্ষা এবং চিকিৎসার সুযোগ সহজলভ্য করা।

৬. প্রি-এক্সপোজার প্রোফিল্যাক্সিস (PrEP): PrEP হলো এইডস প্রতিরোধে কার্যকর একটি ওষুধ, যা এইচআইভি সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।

৭. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা। মাদকদ্রব্য ব্যবহার এড়িয়ে চলা।

চিকিৎসা ব্যবস্থা: এইডস-এর কোনো নিরাময়কারী ওষুধ নেই। তবে, কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি এবং জীবনের মানোন্নয়ন সম্ভব:

i) অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART): এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।

আরো পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান

ii) সহায়ক চিকিৎসা: এইডস-জনিত উপসর্গ যেমন, নিউমোনিয়া বা সংক্রমণ চিকিৎসা করা।
উপসংহার: যৌন পরিবাহিত রোগ, বিশেষত এইডস, শুধু ব্যক্তির জন্য নয় বরং সমাজের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সচেতনতা, সঠিক শিক্ষার প্রসার এবং স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিরোধই এই রোগের সর্বোত্তম সমাধান, কারণ একবার সংক্রমিত হলে এটি সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয়। তাই, যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সুরক্ষিত আচরণ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

Sima Khatun
Sima Khatun

আমি সিমা খাতুন। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স
কমপ্লিট করেছি। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে আমার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য সহজভাবে শেখাতে কাজ করি। শিক্ষার্থীদের সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোই আমার লক্ষ্য।

Articles: 128