প্লেটোর ন্যায়তত্ত্ব কী?
প্লেটোর ন্যায়তত্ত্ব তার বিখ্যাত গ্রন্থ “রিপাবলিক”-এ বর্ণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শন। এটি রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে ন্যায়বিচারের প্রকৃতি এবং তার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে। প্লেটো ন্যায়কে একটি আদর্শ সামাজিক অবস্থা হিসেবে দেখেছেন, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে এবং অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ করে না।
সংজ্ঞা: প্লেটোর মতে, ন্যায় হলো প্রতিটি ব্যক্তির নিজের কাজ সঠিকভাবে করা এবং নিজের ভূমিকা পালন করা। এটি একটি সামাজিক ভারসাম্য, যেখানে সমাজের প্রত্যেক অংশ তার নিজস্ব দায়িত্ব পালন করে। প্লেটো বলেন, ন্যায় হলো:
- ব্যক্তির স্তরে: আত্মার তিনটি উপাদান (বুদ্ধি, সাহস, কামনা) সঠিক ভারসাম্যে থাকা।
- রাষ্ট্রের স্তরে: সমাজের তিনটি শ্রেণি (দার্শনিক রাজা, সৈনিক, ও শ্রমিক) সঠিকভাবে তাদের নিজ নিজ কাজ সম্পাদন করা।
আরো পড়ুনঃ উত্তম সংবিধান বলতে কী বুঝ?
প্লেটোর ন্যায়তত্ত্বের মূল উপাদান
- আত্মার ত্রিধা বিভাজন:
- বুদ্ধি: জ্ঞানী এবং দার্শনিক শ্রেণির প্রতীক।
- সাহস: সৈনিক বা রক্ষক শ্রেণির প্রতীক।
- কামনা: শ্রমিক শ্রেণির প্রতীক।
আত্মার এই তিনটি উপাদান সঠিক ভারসাম্যে থাকলে ব্যক্তি ন্যায়বান হয়।
- রাষ্ট্রের ত্রিধা বিভাজন:
- দার্শনিক রাজা: শাসনের দায়িত্বে থাকবে।
- সৈনিক: রাষ্ট্র রক্ষা করবে।
- শ্রমিক: অর্থনৈতিক উৎপাদন করবে।
প্রতিটি শ্রেণি নিজ নিজ কাজ করলে রাষ্ট্র ন্যায়বান হয়।
- ন্যায় মানে কর্তব্য পালন:
প্লেটোর মতে, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেককে নিজের কাজ করা উচিত এবং অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
ন্যায়ের লক্ষ্য
- ব্যক্তি ও সমাজের সুখ নিশ্চিত করা।
- সমাজে শৃঙ্খলা ও স্থিতি বজায় রাখা।
- বৈষম্য দূর করা এবং সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করা।
আরো পড়ুনঃ উগ্র জাতীয়তাবাদ কী?
প্লেটোর ন্যায়তত্ত্ব একটি আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রদান করে। এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে ভারসাম্য এবং দায়িত্ববোধের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে। প্লেটো বিশ্বাস করেন, যখন আত্মা ও রাষ্ট্রের সব অংশ সঠিকভাবে কাজ করবে, তখনই প্রকৃত ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে।