STD কী এবং কি ভাবে প্রতিরোধ করা যায়? [জা.বি. ২০১৬]
STD বা Sexually Transmitted Diseases হলো যৌনবাহিত রোগ, যা মূলত যৌন মিলনের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায়। এটি বিভিন্ন রোগের সমষ্টি, যার মধ্যে সিফিলিস, গনোরিয়া, এবং এইডস উল্লেখযোগ্য। অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অবাধ এবং অনিরাপদ যৌন আচরণ, সংক্রমিত রক্ত গ্রহণ, বা জীবাণুযুক্ত ইনজেকশন ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। সুরক্ষিত যৌন আচরণ এবং জনসচেতনতা STD প্রতিরোধের প্রধান উপায়।
STD এর পরিচয়: যৌনবাহিত রোগ (Sexually Transmitted Diseases বা STD) হলো এক ধরনের সংক্রামক রোগ, যা প্রধানত যৌন মিলনের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পায় না, ফলে এটি যৌনবাহিত সংক্রমণ (Sexually Transmitted Infections বা STI) পরিচিত। তবে সাধারণত STD নামেই বেশি পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান
STD প্রতিরোধের উপায়
১. কনডম ব্যবহার: প্রতিবার যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। এটি শুধুমাত্র গর্ভনিরোধক করে তা নয় বরং সিফিলিস, গনোরিয়া, এবং HIV-এর মতো যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
২. একাধিক সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক এড়ানো: একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যৌন রোগ দ্রুত ছড়ায়। স্থায়ী ও বিশ্বস্ত সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবাধ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে STD দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তাই সকলকে অবাধ যৌনাচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ ব্যবহার: ইনজেকশন নেওয়ার সময় জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। এটি শুধু STD নয়, হেপাটাইটিস B এবং C এর মতো অন্যান্য মারাত্মক রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাই ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়।
৪. রক্ত পরীক্ষার পর গ্রহণ: শরীরে রক্ত গ্রহণের পূর্বে রক্ত STD বা HIV মুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: STD সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়াতে স্কুল, কলেজ, এবং গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো উচিত। যৌনশিক্ষা বা স্বাস্থ্য শিক্ষা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করলে তরুণ প্রজন্ম STD প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।
৬. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া: যৌনরোগের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে যেকোনো রোগের জটিলতা এড়ানো যায় এবং দ্রুত রোগ নিরাময় হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা
৭. নিজের জিনিসপত্র ব্যবহার করা: অন্যের ব্লেড, ব্রাশ বা সুচ ব্যবহার করা এড়াতে হবে। সেলুন বা পার্লারে ব্যবহৃত ব্লেড বা অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহারের আগে সেগুলো জীবাণুমুক্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া উচিত।
৮. ধর্মীয় এবং সামাজিক নীতিমালা মেনে চলা: সঠিক নৈতিক জীবনযাপন STD প্রতিরোধে সহায়ক। ধর্মীয় ও সামাজিক নীতিগুলো অনুসরণ করলে অবাধ যৌনমিলন, মাদকাসক্তি, এবং অনৈতিক আচরণ এড়ানো সম্ভব। মসজিদ, মন্দির, এবং গির্জার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
৯. গর্ভবতী মহিলার যত্ন: HIV-আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ চিকিৎসা নিতে হবে যেন সন্তান নিরাপদে জন্মায়।
১০. অ্যালকোহল ও মাদক পরিহার: অ্যালকোহল ও মাদকের প্রভাবে মানুষ যৌন আচরণে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা STD ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক জীবনধারা বজায় রাখলে যৌনরোগ প্রতিরোধ সহজতর হয়। বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপসমূহ
পরিশেষে বলা যায়, STD একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা ব্যক্তি, পরিবার, এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষিত যৌন আচরণ, এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যৌনরোগ প্রতিরোধে সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।