সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ?

সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ? [NU- 2021, 22] ★★★

একটি গণতান্ত্রিক দেশে সুশীল সমাজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার জন্য সুশীল সমাজ বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সুশীল সমাজ বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ সুশীল সমাজ সবসময় সরকার ও রাষ্ট্রের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখে। কারণ সরকার সবসময় জনগণের জন্য কাজ করে ও জনগণ সরকারের আনুগত্য প্রকাশ করে।

সুশীল সমাজ: সুশীল সমাজের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Civil Society. সুশীল সমাজ হলো এমন এক ধরনের গোষ্ঠী, যারা সবসময় জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে। সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ স্বতন্ত্র কোন রাজনীতি করে না। কারণ এরা কোন দলের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকে না, হোক সরকারি বা বিরোধী কোন দল। সুতরাং সুশীল সমাজ হলো এমন এক ধরনের গোষ্ঠী যারা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংযুক্ত না থেকে সবসময় জনগণের কল্যাণে কাজ করে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সুশীল সমাজের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি জনপ্রিয় জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদান করা হলো

সমাজবিজ্ঞানী Larry Diamond এর মতে, সুশীল সমাজ হলো এমন এক ধরনের গোষ্ঠী যারা একটি মধ্যবর্তী অস্তিত্বের সাথে ব্যক্তিগত ক্ষেত্র ও রাষ্ট্রের মাঝে অবস্থান করে।

কার্ল মার্কসের মতে, “সুশীল সমাজ বলতে বুঝায় এমন এক ধরনের বস্তুবাদের ভিত্তিভূমি যা আধুনিক সম্পত্তি সম্পর্কে ব্যক্তিদের সংগ্রাম এবং চরম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র‌্যবাদের ক্ষেত্র বিশেষ।”

বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, “সুশীল সমাজ হলো এমন এক ধরনের গোষ্ঠী যার ধারণা এসেছে আঠার শতকে পশ্চিম ইউরোপের পুজিবাদী বুদ্ধিজীবিদের মধ্য থেকে যারা সর্বদা জনকল্যাণের জন্য কাজ করে।”

ইউএনডিপি এর মতে, সুশীল সমাজ হলো এমন এক ধরনের ক্ষেত্র যেখানে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন জম্ম নিবে ও বিকশিত হবে।”

Farnest Glenes এর মতে, “সুশীল সমাজ হচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমষ্টি যার মাধ্যমে রাষ্ট্র ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম।

সুশীল সমাজের উদাহরণ:

  • মানবাধিকার সংগঠন (যেমন: Amnesty International, Human Rights Watch)
  • পরিবেশবাদী সংগঠন (যেমন: Greenpeace, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন)
  • পেশাজীবী সংগঠন (যেমন: সাংবাদিক সমিতি, চিকিৎসক সমিতি)
  • শ্রমিক সংগঠন (যেমন: শ্রমিক ইউনিয়ন)
  • বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (NGO)

সুশীল সমাজের মূল বৈশিষ্ট্য:

  1. স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বেচ্ছাসেবী – এটি নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গঠিত হয়।
  2. অহিংস ও গণতান্ত্রিক চর্চা – সুশীল সমাজ শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করে।
  3. সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন – এটি জনগণের স্বার্থকে সরকারের সামনে তুলে ধরে এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
  4. সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষা – এটি নাগরিক অধিকারের পক্ষে কাজ করে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়।
  5. বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সমষ্টি – এটি এনজিও, শ্রমিক সংগঠন, পেশাজীবী সংস্থা, পরিবেশবাদী আন্দোলন, মানবাধিকার সংস্থা ইত্যাদি নিয়ে গঠিত।

পরিশেষে বলা যায় যে সুশীল সমাজ হলো এমন এক ধরনের গোষ্ঠী যারা সবসময় রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করে। আর এরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman
Articles: 33