উগ্র জাতীয়তাবাদ কী?
উগ্র জাতীয়তাবাদ হলো জাতীয়তাবাদের একটি বিকৃত রূপ। এর ফলে একটি জাতি নিজেকে অন্য জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং অন্যান্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা পোষণ করে থাকে। উগ্র জাতীয়তাবাদ জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের দাবি তুলে ধরে এবং সহিংসতা, বৈষম্য ও যুদ্ধকে উৎসাহিত করে। উগ্র জাতীয়তাবাদীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে সর্বক্ষেত্রে তাদের জাতি স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া আর অন্য জাতির ওপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
উগ্র জাতীয়তাবাদের ইতিহাস: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির উত্থান উগ্র জাতীয়তাবাদের অন্যতম উদাহরণ। নাৎসিরা ইহুদিদের গণহত্যা করে এবং বিশ্বব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে দেয় । বর্তমানেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রবণতা দেখা যায়, যেমন—ভারতের কিছু চরমপন্থী দল সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়।
আরো পড়ুনঃ অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য লেখ
উগ্র জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১. জাতীয়তাবাদের চরম আবেগ: উগ্র জাতীয়তাবাদীরা তাদের জাতির প্রতি চরম আবেগ এবং অন্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ প্রদর্শন করে।
২. বিদ্বেষ ও ঘৃণার প্রচার: এটি অন্য জাতি বা গোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা এবং বৈষম্যের মনোভাব প্রচার করে।
৩. সহিংসতা ও বর্বরতার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন: উগ্র জাতীয়তাবাদীরা প্রায়ই সহিংস উপায়ে তাদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে।
৪. জাতীয় স্বার্থের সর্বোচ্চ প্রাধান্য: উগ্র জাতীয়তাবাদীরা মনে করে তাদের জাতির স্বার্থই সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
৫. গণতন্ত্রের হুমকি: উগ্র জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য বিপজ্জনক। এটি প্রায়শই কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করে।
৬. যুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতা: উগ্র জাতীয়তাবাদ দেশ ও জাতিকে অস্থিতিশীলতা ও যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা প্রায়ই অন্য জাতি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করে।
৭. অসাম্য ও বৈষম্যের জন্ম: উগ্র জাতীয়তাবাদ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর প্রতি বৈষম্য এবং তাদের অধিকার হরণ করে।
উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রতিরোধে পদক্ষেপ:
১. সুশিক্ষার প্রসার: শিক্ষা উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার । সুশিক্ষা মানুষকে সহনশীলতা, বোঝাপড়া ও বৈচিত্র্যের মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করে।
২. গণমাধ্যমের ভূমিকা: গণমাধ্যম উগ্র জাতীয়তাবাদের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যমকে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচারণা এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. আইনের কার্যকর প্রয়োগ: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উগ্র জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ STD কী এবং কি ভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
৪. ধর্মীয় শিক্ষা: ধর্মীয় মূল্যবোধ যথাযথভাবে চর্চা ও পালন নিশ্চিত করলে উগ্র জাতীয়তাবাদ কমিয়ে আনা সম্ভব। পৃথিবীর কোন ধর্মই উগ্র জাতীয়তাবাদ সমর্থন করে না।ধর্ম মানুষকে সহনশীল,পরমত সহিষ্ণু এবং একে অপরকে ভালবাসতে অনুপ্রাণিত করে। যথাযতভাবে ধর্মীয় অনুসশাসন পালন নিশ্চিত হলে উগ্র জাতীয়তাবাদ সহ সমাজে প্রচলিত সকল নেতিবাচক বিষয় গুলো চির তরে মুছে ফেলা সম্ভব।
উপসংহারে আমরা বলতে পারি যে, উগ্র জাতীয়তাবাদ একটি বিপজ্জনক মতবাদ, যা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও মানবাধিকার হুমকির মুখে ফেলে। এর বিস্তার রোধে সুশিক্ষা, সচেতনতা এবং সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু রাষ্ট্রের নয়, বিশ্ব শান্তির জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ।