উত্তম সংবিধান বলতে কী বুঝ?

উত্তম সংবিধান বলতে কী বুঝ?

সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক আইন ও পবিত্র দলিল। সংবিধানের মাধ্যমেই রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অঙ্গ হচেছ সরকার। সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। তাই সংবিধানকে রাষ্ট্রের দর্পণ বলা হয়। 

উত্তম সংবিধানঃ একটি রাষ্ট্রের সুশাসন, স্থিতিশীলতা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য প্রণীত একটি সুনির্দিষ্ট ও সংক্ষিপ্ত শাসনতন্ত্র হলো উত্তম সংবিধান। এটি একটি জাতির জীবন-দর্পণ হিসেবে কাজ করে। উত্তম সংবিধান জনমতের প্রতিফলন ঘটায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে এবং সময়োপযোগী পরিবর্তনের সুযোগ প্রদান করে। এটি সুনিশ্চিত করে যে, শাসনতন্ত্র সহজবোধ্য, ব্যাখ্যাযোগ্য এবং বিচার বিভাগের মাধ্যমে সুরক্ষিত। উত্তম সংবিধান জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা, সামাজিক পরিবর্তন এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখে।

আরো পড়ুনঃ অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা

সংবিধানের প্রামাণ্য সংজ্ঞা: সংবিধান হচ্ছে  একটি রাষ্ট্রের মৌলিক আইন। এটি সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন ও পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে থাকে ।  

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটলের মতে- “কোন রাষ্ট্র নিজেকে পরিচালনার জন্য যে পথ বেছে নেয় তাই সংবিধান’’।

অধ্যাপক ফাইনার বলেন, ‘রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পরস্পরের সমন্ধ হলো সংবিধান।

সি.এফ.ষ্ট্রং বলেন, ‘সংবিধান হচ্ছে সেই সকল নিয়মের সমষ্টি যা সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার এবং এ দু’য়ের সম্পর্ক নির্ধারণ করে।

উত্তম সংবিধানের সংজ্ঞাঃ যে সংবিধান নাগরিকের অধিকার যথাযথ ভাবে সংরক্ষিত রাখে এবং নাগরিকগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তাকেই উত্তম সংবিধান বলে। উত্তম সংবিধান হল এমন একটি সংবিধান যা একটি রাষ্ট্রের জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এটি একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি মৌলিক কাঠামো প্রদান করে। 

K.C.Wheare বলেছেন, “উত্তম সংবিধানের জন্য গণতন্ত্রই হলাে উত্তম ক্ষেত্র।” 

উত্তম সংবিধানের গুণাবলি: উত্তম সংবিধান সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য ভাষায় রচিত হয়। নিম্নে এর  গুণাবলী  তুলে ধরা হলো – 

১. সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট: সংবিধানের ধারা-উপধারাগুলো সুনির্দিষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রচিত।

২. সংক্ষিপ্ত: অপ্রয়োজনীয় বিষয় পরিহার করে সংক্ষিপ্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত।

৩. মৌলিক অধিকার অন্তর্ভুক্তি: নাগরিকদের স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য মৌলিক অধিকার অন্তর্ভুক্ত থাকে।

৪. সময়োপযোগিতা: পরিবর্তিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চাহিদার সাথে সংবিধান সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৫. গণতান্ত্রিক চেতনা: গণতন্ত্র সংবিধানের ভিত্তি ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

৬. সার্বভৌম ক্ষমতার ভারসাম্য: রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।

৭. সহজ সংশোধন পদ্ধতি:  সুপরিবর্তনীয় তবে অযথা পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত।

৮. লিখিত রূপ: শাসনব্যবস্থার স্থায়িত্ব এবং অধিকার সুরক্ষার জন্য এ সংবিধান লিখিত হয়।

৯. জনমতের প্রতিফলন: জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকে।

আরো পড়ুনঃ মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান

১০. বিচার বিভাগের প্রাধান্য: সংবিধান রক্ষায় বিচার বিভাগের প্রাধান্য ও ক্ষমতা থাকেঠাক

পরিশেষে বলা যায়, সংবিধান একটি রাষ্ট্রের জনগণের স্বাধীনতা, অধিকার ও সুরক্ষার রক্ষাকবচ। এটি একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মৌলিক কাঠামো প্রদান করে। সংবিধান রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করে এবং ন্যায়বিচার, ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখে।  

Sima Khatun
Sima Khatun

আমি সিমা খাতুন। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স
কমপ্লিট করেছি। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে আমার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য সহজভাবে শেখাতে কাজ করি। শিক্ষার্থীদের সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোই আমার লক্ষ্য।

Articles: 128